সেক্যুলারিজম প্রশ্নে জন আকাঙ্ক্ষার ভাবনা
জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ শুরু থেকেই বলেছে কোন তত্ত্ব ও মতবাদ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করবে না। এর মানে তো এই নয় প্রচলিত মতবাদগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে সেক্যুলারিজম, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। এ কারনে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে তত্ত্ব ও মতবাদ নিয়ে বিভাজন জারি আছে। মতবাদকে প্রাসঙ্গিক রাখে তার অনুসারীরা। বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীরা আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। এর মধ্যে সেক্যুলারিজম নিয়ে প্রশ্ন এসেছে সবচেয়ে বেশি। প্রশ্ন আসলে উত্তর দিতেই হয়। সেক্যুলারিজম প্রশ্নে তাহলে জন আকাঙ্ক্ষার ভাবনা কি? জন আকাঙ্ক্ষার প্রধান সমন্বয়ককে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন 'রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানুষের ইহলৌকিক বিষয়াদি সমাধান করা'। বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন,
"ইহলৌকিক শব্দের ইংরেজী করা হয়েছে ‘সেক্যুলার’। যার বিপরীত শব্দ হলো পারলৌকিক। পারলৌকিকতার চুড়ান্ত ফল দুনিয়াতে পুরো দৃশ্যমান হবেনা তার চুড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে পরকালে। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের মতে রাজনীতি হলো ইহলৌকিকতার ব্যপার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানুষের ইহলৌকিক বিষয়াদি সমাধান করা। আর ধর্মের কাজ হলো পারলৌকিক। তাই তারা ধর্ম আর রাজনীতির ক্ষেত্র কে আলাদা মনেকরেন। কিন্তু ইসলাম ধর্মের বিধানে পারলৌকিক সাফল্য কে ইহলৌকিক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। ব্যক্তির ইহলৌকিক কাজের উপরই তার পারলৌকিক সাফল্য বিচার করা হবে। সেজন্য একটা বড় অংশের ইসলামী তাত্ত্বিকগণ রাজনীতিকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনেকরেন। তারা ইসলাম ও রাজনীতিকে আলাদা মনেকরেন না। এই বিবেচনায় ইসলাম ও সেক্যুলারিজমের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। আমি মনেকরি ইসলাম সেকুলারিজম বা ইহলৌকিকতাকে ধারণ করে। সমস্যা হচ্ছে ইন্টারপ্রিটেশন নিয়ে। বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের অর্থ করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। এটা ভুল বলে আমি মনেকরি।
একজন মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেনা যদি না সে ধর্মহীন মানুষ হয়। একজন ধর্মবিশ্বাসী মানুষ কে প্রতিদিনই ইহলৌকিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। যেমন সে খাদ্য গ্রহণ করে, কাপড় পরিধান করে, গাড়ীতে চড়ে, কলম দিয়ে লিখে, কাগজ, ঘড়ি, চশমা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করে এগুলো সব ইহলৌকিক কাজ। এই ইহলৌকিক কাজটা সে যখন ধর্মের নিয়ম মেনে করে তখন সেটাও তার পারলৌকিক পুরস্কারের মাধ্যম হয়ে যায়। বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের ধারনা কে ধর্মহীনতার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও দূ:খজনক ব্যপার হচ্ছে সেক্যুলারিজম এবং ইসলাম কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা ভয়ানক অজ্ঞতা ও বিপদজনক ইন্টারপ্রিটেশনের ফল। সার্বিক বিচারে একজন মুসলিম হিসেবে আমি ইহলৌকিক রাষ্ট্রভাবনার সাথে ইসলামের কোন বিরোধ দেখিনা।"*
প্রশ্ন হল, কেউ যদি এই ব্যাখ্যার সাথে একমত না হন? কোন সমস্যা নাই। আমাদের কোন ব্যাখ্যা আপনাকে মানতেই হবে এমন কোন দাবী নেই। ভিন্নমত নিয়েও আপনি আমাদের সাথে কাজ করতে পারেন। কেননা, নীতিগতভাবে কোন তত্ত্ব বা মতবাদ প্রতিষ্ঠার কাজ করবে না জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ। সেজন্য যেকোন তাত্ত্বিক বিষয়ে একমত হওয়া আবশ্যক নয়।
-- #