“আমার বাংলাদেশ পার্টি” (এবি পার্টি)-র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য
সুপ্রিয় দেশবাসী বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম ।
করোনা বিপর্যস্ত কষ্টের দিনে পবিত্র রমজান আমাদের জন্য রহমতের উপলক্ষ হিসেবে উপস্থিত। আশা ও উদ্বেগ মিশ্রিত এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছি আমরা। সেরকম দুঃসময়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। আপনারা আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
১ ) আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর মহামারী করোনা’র প্রকোপে বাংলাদেশ আজ এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের চেয়েও আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ বেশি বিপর্যস্ত। চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বহু মানুষ। চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক শত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন। দেশের বহু জেলায় ক্ষুধার্ত মানুষ মাঠে নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খাবারের জন্য। এমতাবস্থায় প্রথাগত রাজনৈতিক দল ও তাঁদের অধিকাংশ নেতা-কর্মী স্বপ্রণোদিত হয়ে কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। ক্ষোভে, দুঃখে ও কষ্টে জনগণ দিশেহারা। পরিস্থিতির এ রকম নাজুকতার কারণে অনেকের জিজ্ঞাসা, দেশের এই ক্রান্তিকালে আমরা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করছি কেন?
২ ) আপনারা অবগত আছেন, ২৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ ’ নামক নতুন একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে । এটি ছিল নতুন উদ্যোগের প্রাথমিক ঘোষণা মাত্র। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নীতির ভিত্তিতে একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এ অভিযাত্রা শুরু হয়। ইতোমধ্যে সেই যাত্রার ১ বছর পূর্ণ হয়েছে।
৩ ) ২৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়ার পর দেশের নানা প্রান্ত থেকে যাঁরা আমাদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করেন এবং একাত্মতা জানান আমরা তাঁদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি। দেশের বাইরের প্রবাসী নাগরিক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাঁরা নানা মত প্রকাশ করে সহমর্মিতা জানান, আমরা তাঁদের সবাইকে ক্রমান্বয়ে সংগঠিত করার চেষ্টা করি।
৪ ) এই ১ বছরে দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা আগ্রহী মানুষদের সাথে সাক্ষাৎ করতে ব্যাপক সফর করেছি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। এসব সফরে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। রাজনীতি সচেতন সর্বস্তরের নাগরিকদের সাথে সভা সংলাপ করে বোঝার চেষ্টা করেছি কেমন বাংলাদেশ তাঁরা চান? দেশ নিয়ে তাঁদের আকাঙ্ক্ষাগুলো কী? অনেকে আমাদেরকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, এভাবে তৃণমূলের মানুষদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এর আগে কোন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে বলে তাঁদের জানা নেই।
৫ ) এই এক বছরে আমাদেরকে হাজার হাজার মানুষ যেমন স্বাগত জানিয়েছেন এবং আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তেমনিভাবে অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, নানা অপবাদ, রটনা ও ট্রল করে হতাশ করার চেষ্টাও করেছেন। আমরা উভয় ধরণের মানুষদের কাছ থেকে শিখেছি, এখনো শিখছি। বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের সাথে পরামর্শ ও চিন্তাকে অন্তর্ভূক্ত করে আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নাম, কর্মসুচী, খসড়া গঠনতন্ত্র ও আহ্বায়ক কমিটি প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছি। আজ ২রা মে ২০২০ আমরা আপনাদের সামনে সেসব নিয়ে হাজির হয়েছি।
৬ ) এর আগে বন্যা পরিস্থিতি ও ডেঙ্গুর ভয়ানক বিস্তৃতির কারণে আমরা দু'বার আমাদের দল ঘোষণার কার্যক্রম পিছিয়ে এনেছি। করোনা পরিস্থিতিতে দেশ আজ যে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন, তাতে আমরা মনে করি সবচেয়ে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে একটি কার্যকর রাজনৈতিক দল। অতীতেও জাতির সংকট মূহূর্তে রাজনীতি মানুষের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জাতি যখন দিকভ্রান্ত হয়, হতাশায় মুষড়ে পড়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দল তখন নাগরিকদের পথনির্দেশ করে, আশা জাগায়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণকে সংগঠিত করে, সাহস ও প্রেরণা সঞ্চার করে। আমরা মনে করি করোনাকাল সারা পৃথিবীর জন্য নতুন বার্তা বাহক। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক স্তর বিন্যাস সবকিছুতেই একটা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
৭ ) এরকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সবাই যখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছাবন্দীত্ব গ্রহণ করছে, আমরা তখন স্পষ্ট করে বলছি রাজনৈতিক কর্মীর জন্য স্বেচ্ছাবন্দীত্বের কোন সুযোগ নেই। রাজনৈতিক কর্মীকে সতর্কতা অবলম্বন করে ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও জাতির বিপদ মোচনে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দল তার সামর্থ্য অনুযায়ী দেশ বাঁচাতে নীতি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করবে। তাহলেই সেই দল সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও নাগরিকবান্ধব দল হিসেবে পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠা পাবে। তাই করোনাকাল কে আমরা আমাদের দল ঘোষণার উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করেছি। সমলোচকদের তীর্যক মন্তব্য ও f&iæকুটি উপেক্ষা করে আমরা ঘোষণা করছি আজ থেকে আমাদের দলের নাম ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (সংক্ষেপে এ বি পার্টি)।
৮ ) বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর বিদ্রোহী কবিতায় বলেছিলেন- “আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”। আজ স্তব্ধ পৃথিবীর কোটি কোটি মলিন মানুষের হতাশাগ্রস্ত চোখে অশ্রুর বন্যা। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আজ উদ্বিগ্ন। আমরা সেখানে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে বলছি এ দেশকে বদলাতে হবে। এই দিনকে পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আপনারাই বলুন পুষ্প কি আপনা আপনি ফুটে? অবশ্যই ফুটেনা। পুষ্প ফোটাতে হলে কষ্ট করতে হয়, শ্রম দিতে হয়, কাটার আঘাত উপেক্ষা করতে হয়। এবি পার্টি আজ দেশ ও জাতির সামনে সাহসী সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলছে আমরা এই ধুসর কন্টকময় বাগানে ফুল ফোটাবার জন্য কাজ করব। ইন শা আল্লাহ এই দুঃখের সময় কেটে যাবে। আমরা যদি বদলাতে পারি, আশা ও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমার বাংলাদেশ একদিন ঘুরে দাঁড়াবে।
দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,
৯ ) দেশে-বিদেশে যাঁরাই আগ্রহ নিয়ে আমাদের এই ঘোষণা শুনছেন, যাঁরা জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশকে এই পর্যন্ত আসতে আমাদের সঙ্গী হয়েছেন, যাঁরা আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, যাঁরা আমাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন, যাঁরা আমাদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন, আপনাদের সকলের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের প্রতি, যাঁরা আমাদের আমন্ত্রণে এখানে এসেছেন এবং আমাদের উদ্যোগকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেসব সহযোদ্ধাদের প্রতিও, যাঁরা শুরু থেকে জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ উদ্যোগের সাথে ছিলেন, কিন্তু বিভিন্ন বাস্তবতায় নতুন দল গঠন প্রক্রিয়ায় সামনে থেকে নেতৃত্ব না দিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পেছন থেকে সহযোগিতা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
১০ ) আমরা জানি, বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনে নানা সঙ্গত কারণে রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। বর্তমান করোনাসৃষ্ট সংকট রাজনীতিকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাষ্ট্র কর্তৃক বন্টন করা ত্রাণ লুটের মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা নতুন করে রাজনীতিকে আবারো অপমানিত করেছেন। মিডিয়া নিয়ে ফটোসেশনের উদ্দেশ্যে কৃষকের ক্ষেতে লোক দেখানো ধান কাটতে গিয়ে বহু কৃষকের ফসল নষ্ট করে নিন্দিত হয়েছেন কোন কোন রাজনীতিবিদ। অন্যদিকে, সংকট মোকাবেলায় রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতা নাগরিকদের মনে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়েই আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। করোনা সংকট আমাদের নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে আমাদের রাষ্ট্র কতটা ভঙ্গুর, প্রশাসন কতটা অদক্ষ, অপ্রস্তুত ও দুর্নীতিগ্রস্থ! এই সংকট দেখিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কতটা ব্যর্থ এই সরকার, আর এই রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়বার কতটা প্রয়োজন।
১১ ) স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে এদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাদের একটা অঙ্গীকার ও অভিপ্রায় ছিল, কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা নিয়ে ভাবলেই প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। যে রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের নামে আগের রাতে ভোট হয়, যে রাষ্ট্রে বিরোধী জোট ভোট বর্জন করে আবার সেই অবৈধ সংসদেই শপথ নেয়, যে রাষ্ট্রে মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা নাই, সরকার প্রধানের সমালোচনা করলে দেশদ্রোহ বা নিরাপত্তা আইনের মামলায় জেলে যেতে হয়। যে রাষ্ট্রের দুর্নীতি দমন কমিশনেই চলে দুর্নীতি, জলজ্যান্ত মানুষ গুম হয়ে যায় আর ফিরে আসেনা, যে রাষ্ট্রে বৃদ্ধা নারী থেকে শুরু করে ৪ বছরের শিশু পর্যন্ত বীভৎস নির্যাতনের শিকার, যে রাষ্ট্রের শহরগুলো সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায়, যে রাষ্ট্রে কোটি মানুষ বেকার, যে রাষ্ট্রের খাবার মানেই ভেজাল ও ফর্মালিনের আতংক, যেখানে বায়ু দূষণ পৃথিবীর সর্বোচ্চ মাত্রা স্পর্শ করেছে, যে রাষ্ট্রে খাবারের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নাগরিককে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় - এটা কোন ধরনের রাষ্ট্র? যে রাষ্ট্রে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, নাগরিকদের মান, সম্মান ও জীবনের মূল্য নেই সেটা কী প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ণতা পেয়েছে? আমরা মনে করি ভৌগোলিক সীমানার ভিত্তিতে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি সত্য, কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। অধিকার ভিত্তিক কল্যানরাষ্ট্র হিসেবে এ রাষ্ট্র অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। সেজন্য ২৭ এপ্রিল ২০১৯ এ আমরা বলেছিলাম এ রাষ্ট্রের আমূল মেরামত প্রয়োজন। এ বি পার্টি এ বিনির্মাণের লড়াইয়ে রাষ্ট্রের আসল মালিক জনগণকে সাথে নিয়ে পুনর্গঠনের কাজ করতে চায়। আমাদের প্রত্যয় রাষ্ট্রীয় নিপীড়নমুক্ত জন আকাঙ্ক্ষার ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গঠন।
প্রিয় সংগ্রামী দেশবাসী,
১২ ) ১৯৪৭ সালের আগে উপনিবেশিক ভারতবর্ষে আমাদের উপর জুলুম শোষণ চালানো হতো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। তাই ১৯৪৭ সালে আজাদী অর্জিত হয়েছিল ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে। ১৯৪৭ সালের পর নবগঠিত রাষ্ট্রে বাঙ্গালী বলে আমাদের সাথে বৈষম্য করা হত। সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত অধিকারের দাবী জানানোর কারণে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আমাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হত। ১৯৭১ সালে অপরিসীম ত্যাগ, রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে আমরা চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, কেউ আর আমাদের উপর ধর্মীয় পরিচয় বা বাঙ্গালী আত্মপরিচয়ের কারণে জুলুম করবে না, আমাদের মারবে না, আমাদের অধিকার কেড়ে নেবেনা। আজ তো কোনো উপনিবেশিক শাসক নেই, নেই কোনো আইয়ুব বা ইয়াহিয়্যা খান। তবুও কেন আজ রাজনৈতিক সংঘাত, গুম, খুন, ক্রসফায়ার ও পুলিশী জুলুমে মারা যাচ্ছে স্বাধীন দেশের নাগরিকরা? নির্যাতিত মজলুম নাগরিকেরা কেন আগের মত সম্মিলিতভাবে জালেমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছে না?
১৩ ) আমরা উপলব্ধি করছি, নাগরিকদেরকে বিভাজিত রাখতে ঔপনিবেশিক শাসনের আদলে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসি আজও কার্যকর। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, শাসকের পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু শোষণ ও জুলুমের অবসান আজও ঘটেনি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। যে মূলনীতিগুলো ১৯৭১ সালে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, যে মূলনীতিগুলো মানুষদেরকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল আজকে আমরা যেন সেসব ভুলতে বসেছি। এসব মূলনীতির স্থলে নাগরিকদের বিভাজিত করতে জায়গা করে নিয়েছে লুন্ঠনবাদী কূটকৌশল এবং মতাদর্শ ও মতবাদের রাজনীতি।
তাই আমাদের দলের একটি স্লোগান হল মতবাদ-মতাদর্শ যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার- এই বিশ্বাস ও বোধকে ধারণ করতে পারলে আমরা আবার দেশ গড়ার কাজে ঐক্যবদ্ধ হতে পারব বলে আমরা মনে করি।
১৪ ) আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের আজ যে স্বাধীন অস্তিত্বে বিরাজমান তা শতশত বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলশ্রুতি। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় আমাদের অবিস্মরণীয় জাতীয় অর্জন। দলমত নির্বিশেষে সকলকে এই অর্জনের প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন ধরনের দ্বিধা, হীনমন্যতা, বিভক্তি ও বিদ্বেষ কোন সুনাগরিকের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল একটি শোষণমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যারা এটা মানেন না বা বিশ্বাস করেননা এবং এ অঙ্গীকার ভঙ্গ করে রাষ্ট্রকে ভুল পথে নিয়ে এসেছেন, তারা কেউ দেশের প্রকৃত বন্ধু নন। আমরা মনেকরি ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় আমাদের জাতীয় ঐক্যের অন্যতম পাটাতন। এবি পার্টি এই পাটাতনকে সূদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর।
১৫ ) বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য সংস্কৃতি এদেশের মানুষের মনেপ্রাণে প্রোথিত। নিজ ধর্ম নিয়ে হীনমন্যতা বা বাড়াবাড়ি কোনটাই এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দেশের কৃষ্টি, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি, উন্নয়ন সবকিছুতেই ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এদেশের প্রতিটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ধর্মীয় নেতৃত্বের একটি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে ধর্মীয় দলগুলোর মাঝে মতাদর্শিক অনৈক্য খুবই প্রকট। নীতি ও মতভেদের কারণে একে অপরের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়া, পরস্পরকে বাতিল মনে করা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। নিজেকে একমাত্র সঠিক অন্যদের না-হক বা বাতিল মনে করার একদেশদর্শী চিন্তা বিপদজনক বিভাজনের জন্ম দেয়।
১৬ ) আমরা মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পবিত্র ধর্ম নিয়ে বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি রাজনৈতিক অনৈক্য বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধকে স্বীয় সম্পত্তি বা একক অর্জন মনে করে অন্যদের সবার অবদানকে অস্বীকার করা এবং গড়পড়তা সবাইকে দেশবিরোধী ভাবা স্পষ্ট হটকারিতা ও স্বাধীনতার অঙ্গীকারের চরম লংঘন। অনুরূপভাবে নিজেদেরকে ধর্মের একমাত্র সোল এজেন্ট এবং বাকীদের পথভ্রষ্ট, নাস্তিক, বিপথগামী ও মুনাফেক ভাবা চরম অন্যায় ও অধার্মিকতা। এবি পার্টি ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ কে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রেখে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। আমরা বিশ্বাস করি দেশাত্মবোধ ও দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সকল ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সমান আচরণ এবং সামাজিক সুবিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি আধুনিক ও কল্যাণরাষ্ট্র গঠিত হলেই কেবল মানুষের মুক্তি মিলবে। তাই একটি আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এবি পার্টির প্রধান লক্ষ্য। আর এ জন্য ৭ দফা কর্মসূচি আমরা প্রণয়ন করেছি যা আপনাদের সামনে আজ ঘোষণা করা হবে।
১৭ ) আমরা আগেও বলেছি আজ আবারও বলছি- রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে এটা প্রমানিত যে, মতাদর্শ ও মতবাদের রাজনীতি নাগরিকদের মাঝে কেবল বিভাজনই বাড়ায়। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের যে নীতি সে নীতিগুলোই পারে সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও মতাদর্শের নাগরিকদের মধ্যে ন্যুনতম জাতীয় ঐক্যের সূত্রপাত ঘটাতে। এ বি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা আহ্বান করছি, আসুন আমরা মতাদর্শিক বিভাজন বর্জন করে গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে পুনর্গঠনের কাজে শামিল হই।
প্রিয় তরুণ প্রজন্ম,
১৮ ) আমরা বুঝতে পারছি আপনারা সংক্ষুব্ধ। আমরা আপনাদের অনুভূতির প্রতি সহমর্মী। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও বয়সের মানুষের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, এ দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনার। সংবিধান নাগরিকের যে অধিকার দিয়েছে তা আমরা ভুলতে বসেছি। আমাদের যে অধিকার এমনিতে ভোগ করার কথা, দু:খজনকভাবে তা আমাদেরকে ঘুষ দিয়ে কিংবা মামা, চাচা ও নেতার তদবীর দিয়ে অর্জন করতে হয়। এটা আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেবল আপনারাই পারেন এই অচলায়তনের সমাপ্তি ঘটাতে।
প্রিয় ছাত্র বন্ধুরা,
১৯ ) আপনারা এই দেশের গৌরবোজ্জ্বল গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরাধিকার। আজ আপনারা নিরাপদে পড়াশুনা করতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব। পড়াশুনা শেষ করে চাকুরি পাচ্ছেন না। বছরের পর বছর বেকার হয়ে আছেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ । সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে তীব্র কোটাবৈষম্য, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় পরিচয়ের কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন আপনারা। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ করে রক্ত দিয়ে, জেল খেটেও আপনাদের অধিকার অর্জিত হয়নি। এর কারণ ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী আপনাদেরকে ‘আমরা’ এবং ‘ওরা’ তে বিভাজন করে রেখেছে। এখানে কেবল তারাই চাকুরি পাচ্ছে যাদের দলীয় পরিচয় আছে, যাদের মামা, কাকা, খালু বা ঘুষ দেয়ার টাকা আছে। কেবল মেধার ভিত্তিতে চাকুরি পাবার যে দাবী আপনাদের, তার সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করি। আমরা স্বজনপ্রীতি ও দলীয় ক্যাডার তৈরির এই দুষ্টচক্র ভাঙতে আপনাদের সাথে লড়ব।
সংগ্রামী কৃষক-শ্রমিক ভাইয়েরা,
২০ ) এক সময় পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে এবং কৃষক-শ্রমিক-স্বার্থের পক্ষে আমরা সোচ্চার ছিলাম। কিন্তু করোনা-সংকটে আমরা দেখেছি কিভাবে পুঁজিপতি শ্রেণির নিজস্ব লাভের জন্যে দরকষাকষিতে আপনাদেরকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমরা জানি আপনাদের চাকুরির কোন নিশ্চয়তা নেই। ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি ন্যুনতম মজুরী নিয়ে দরকষাকষি করেন মালিকপক্ষ। কৃষক-শ্রমিকদের মানবিক মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে এ বি পার্টি সোচ্চার থাকবে। আপনাদের ন্যায্য দাবি, সম্মানজনক বেতন-ভাতা ও নিরাপদ কর্মস্থলের দাবি এবি পার্টিরও দাবি। কৃষক ও শ্রমিক সমাজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করা আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সম্মানিত নারী সমাজ, আমাদের মা ও বোনেরা,
২১ ) দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হয়েও আপনাদেরকে অদৃশ্য করে রাখা হয়েছে। আমরা নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের বিলোপ ঘটিয়ে নারীদের প্রকৃত নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন কর্মস্থল এবং রাজনীতিতে নারীদের পূর্ণ ক্ষমতায়নে এ বি পার্টি বদ্ধপরিকর।
শান্তিপ্রিয় সংখ্যালঘু বন্ধুগণ,
২২ ) ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত বিভাজনের উর্ধ্বে আমাদের রাজনীতি। আমরা প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত সকল ধর্মের নাগরিকদের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা ‘সংখ্যালঘু’ ক্যাটাগরির মাধ্যমে সংখ্যাগুরুর সাথে তাদের একধরণের মনস্তাত্বিক দেয়াল তৈরি করতে সচেষ্ট। রাষ্ট্রের এমন ক্যাটাগরি সমাজে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ জারি রেখেছে। সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের নাগরিকদের সমানাধিকার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কল্যাণরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমরা বিশ্বাস করি নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পেলে রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর মধ্যে বিরোধ ও মানসিক দেয়ালের অবলুপ্তি ঘটবে যা রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যে অপরিহার্য।
প্রিয় প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাগণ,
২৩ ) আপনারা বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। নিজের দেশ ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে প্রবাসে থাকার বেদনা আমরা অনুভব করি। দেশ নিয়ে আপনাদের স্বপ্ন, আবেগ ও উদ্বেগকে আমরা সম্মান করি। করোনার সংকট আমাদেরকে দেখিয়েছে রাষ্ট্র ভঙ্গুর হলে, প্রশাসন অদক্ষ হলে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কতটা নিগ্রহ ও অপবাদের শিকার হয়। আমরা এই রাষ্ট্রের মেরামত ও প্রশাসনের সংস্কারকে রাজনৈতিক কর্মসূচী আকারে নিয়েছি। আমরা প্রবাসীদের নাগরিক অধিকার, ভোটের অধিকার ও মানবিক মর্যাদার সাথে প্রবাসে বসবাসের নিশ্চয়তা বিধানে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাব।
প্রিয় দেশবাসী ভাই-বোনেরা,
২৪ ) বাংলাদেশ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে। ইতিহাস আমাদেরেকে বলে, যে কোনো ক্রান্তিকাল নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। করোনার এ বৈশ্বিক সংকট একদিন অবশ্যই কেটে যাবে। করোনা-উত্তর সময়ে আমরা কি করোনাপূর্ব বাংলাদেশকেই দেখতে চাইব? আমাদের বিবেচনায় বর্তমানে আমাদের রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি এবং ধর্মনীতি সব দিকেই বাংলাদেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রায় ৫০ বছর হতে চললো আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। অথচ এখানে এখনো গণতন্ত্র, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, ভোটাধিকার - কোনো কিছুই আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। লক্ষ লক্ষ নাগরিক অনাহারী ও গৃহহীন। ধনী ও গরীবের মধ্যকার বৈষম্য আকাশসম।
২৫ ) আমরা মনে করি বর্তমান বাংলাদেশের সংকটের অন্যতম কারণ গণতন্ত্রহীনতা এবং এ কারণেই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অচলায়তন। অদক্ষ ও অসৎ শাসক শ্রেণির দুর্বলতার সুযোগে কোথাও কোথাও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে অনির্বাচিত প্রশাসনিক আমলাদের হাতে। যার ফলে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। শেষবিচারে বর্তমান বাংলাদেশের সংকটের মূল কারণ রাষ্ট্রের অকার্যকারিতা।
২৬ ) গত শতকের নব্বইয়ের দশকে আমরা গণতন্ত্রের জন্য যে প্রেরণাদায়ক লড়াই করেছিলাম সেটা সফল হয়নি। কারণ সে সময় কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বিবেচনায় না নিয়ে নিছক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠাকেই আমরা অভীষ্ট লক্ষ্য বানিয়েছিলাম। এরপর দলীয় মতাদর্শিক লাইনে সরকারগুলো নাগরিকদেরকে বিভক্ত করেছে। আজকে আমরা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি যে, গোটা রাষ্ট্রকে পরিপূর্ণ মেরামত ব্যতীত আমাদের আর উত্তরণের পথ নেই। এবি পার্টি রাষ্ট্রের পূনর্গঠনের দাবী তুলছে। আমরা গণতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলছি। তবে, আমরা মনে করি না, গণতন্ত্র একবার অর্জিত হয়ে গেলেই কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। বরং নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় আমরা বর্তমানের মত বারবার শুরুর বিন্দুতে ফিরে যাবো।
২৭ ) পৃথিবীর ইতিহাসে আকাশ থেকে কোন সেলিব্রেটি নেতা জাতি উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি। আমরা দেখেছি, দাস প্রথা থেকে মুক্তি, নারীর মর্যাদা রক্ষা, গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনমুখী নেতৃত্বের অভ্যুদয় ঘটে। এ বি পার্টি জাতির জন্য সে রকম নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চায়। সুশাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও জুলুম-শোষণ থেকে মুক্তির জন্য যুগে যুগে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা আমাদের প্রেরণা। যাঁরা এই প্রেরণায় উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত; তাঁরাই হবেন আগামী বাংলাদেশের নেতা। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমরা তাঁদেরকে অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে চাই। আসুন, আমরা সবাই এ মিছিলে শরিক হই। মতবাদ-মতাদর্শ যার যার, কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের সবার। রাষ্ট্রের মেরামতে আমরা সবাই অংশ নিলেই রাষ্ট্রের মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হবে।
আপনারা জানেন করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান, অসুস্থদের সহায়তা, বিপদগ্রস্তদের জন্য ফুডব্যাংক কার্যক্রম সহ ৫ দফা কার্যক্রম শুরু করি যা আজকের দল ঘোষণার পর আরও we¯Í…Z হবে ইন শা আল্লাহ। করোনা মহামারী ও এর ভবিষ্যত প্রভাবে দেশে মারাত্মক মন্দা ও অভাব দেখা দিতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে সেজন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেছি। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে কৃষিখাতকে আপাতত সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে আমরা মনে করি। বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে প্রণোদনা দিয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক অবস্থাকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। আকস্মিক বেকারত্বে সামাজিক বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের আত্মপ্রকাশের জন্য যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তা আমরা ইতোমধ্যে বাতিল করেছি। দল ঘোষণা উপলক্ষে আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্যে ২০ হাজার বিপদগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সাহায্য প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছি। আপাতত আমাদের পরিকল্পনা হল এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ, মানব সেবা সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মনোনিবেশ করা এবং নীতি নির্ধারনী বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়ন। আল্লাহর রহমতে এই দুর্যোগ কেটে গেলে আমরা দলীয় কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে পারব। আজ আমরা যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করব, সে কমিটির দায়িত্ব হবে সব জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা। দলের জন্য খসড়া গঠনতন্ত্রকে চূড়ান্ত করা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক জাতীয় কনভেনশনের আয়োজন করে দলের নেতৃত্ব নির্বাচন।
যে সকল সংবাদ কর্মীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আজ আমাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন, যাঁরা অধীর আগ্রহ নিয়ে লাইভে আমাদের এ দীর্ঘ বক্তব্য শুনেছেন এবং শুনবেন তাদের সবার প্রতি রইলো অসীম কৃতজ্ঞতা।
আমার বাংলাদেশ, প্রিয় বাংলাদেশ, দুঃখী ও স্বপ্নের বাংলাদেশ একদিন সত্যিকার কল্যাণরাষ্ট্র হবে সেই আশা ও অঙ্গীকার নিয়ে শেষ করছি। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
মজিবুর রহমান মন্জু
সমন্বয়ক।
Speech at the Inauguration Ceremony and Press Conference of the new political party "Amar Bangladesh Party" (AB Party)
Dear Compatriots,
Assalamu Alaikum.
Holy Ramadan has come upon us as a blessing and mercy amidst the COVID-19 crisis. In these unusually difficult times, we are both hopeful and anxious. We appear before you today to make a historic announcement and decision. Please accept our sincere wishes.
- Bangladesh is facing an unprecedented crisis as a result of the current COVID-19 pandemic. Our country is more afflicted today than many other countries in the world. Many people have died due to lack of treatment. Hundreds of doctors, nurses and health workers have been infected by the virus while undergoing treatment. Many others have died. In many districts, hungry people have taken to the streets to protest against the lack of food. Political parties and the vast majority of their leaders have now ‘self-quarantined’ neglecting the sufferings of the people. Large sections of the population are overcome by anger, grief and suffering. Given the critical nature of the conditions, many have asked as to why we have decided to launch a political party now.
- As you are aware, on 27 April 2019, a new political initiative called 'Jana Akangkhar Bangladesh’ (literally translated as ‘Aspirations of the People of Bangladesh') was launched through a press conference in Dhaka. This was merely an announcement of the new initiative. Our journey began with the aim of building a modern welfare state based on the principles of equality, human dignity and social justice, as mentioned in the Proclamation of Independence of 1971. It’s been a year since we commenced our journey.
- After the announcement at the press conference on 27 April 2019, we contacted people from different parts of the country who were interested in and had expressed solidarity with the new initiative. We tried to organise large sections of the Bangladesh diaspora in various countries and also mobilised social media users who had expressed interest in our programs.
- In the last year, we have visited interested people across the country - in cities in every division, including various districts and remote regions of the country. At the invitation of the expatriate community, we travelled to different countries and participated in various programmes. During these visits, we exchanged views with people of different classes, professions, religions and ideologies. We have participated in dialogues with politically conscious citizens from all walks of life to try to understand their hopes and aspirations for Bangladesh. Many have applauded us for adopting the unique method of consultation at all levels, including the grassroots level, before launching a political party.
- Throughout the last year, thousands have welcomed our initiative and shown interest in joining us. But we have also faced ridicule, slander and prejudice. We have learnt from all, and will continue to do so. Following consultation at various levels, we have drawn up the name, programmes, draft Constitution and Convening Committee of the new political party. Today, on the 2nd of May 2020, we appear before you with these documents.
- It may be mentioned that we had postponed the announcement of our Party on two earlier occasions due to the flood and the spread of dengue fever. It is our belief that an effective political party can play a constructive role in combating the cornoavirus crisis that is crippling the country. In the past too, politics has played an important role in upholding human rights in times of crisis. When fear, frustration and despair grip a people, it is for the political party to guide the nation and inspire hope amongst the masses. At different junctures in history, politics has played a crucial role in organising the people and inspiring and motivating them. The coronavirus pandemic has come to deliver a global message. A change is inevitable in the economy, politics and social structure of the country.
- While the vast majority of the people have quarantined themselves to protect against the deadly virus, we would like to make it clear that there is no scope for self-quarantining of a political activist. Political activists must be careful, yet work diligently and sincerely, to rescue the country and its people. Political parties have to formulate policies and strategies to the extent possible to face the challenges thrown up by the pandemic. Only then may a political party be recognised as a patriotic and people friendly party. The present time, we believe, is appropriate for the launching of a new political party. Today, we announce the name of our party as ‘Amar Bangladesh Party’ (in short, AB Party).
- In a famous poem, Kazi Nazrul Islam, the national poet, said: "I am sitting in the fire of hell and smiling like a smiling flower". Today there are tears in the eyes of billions of people across the world; they are scared and worried. Our country is not an exception. Every person in Bangladesh is worried. We stand before you today and say that changes have to be brought to this country. We have to change our lot. A flower will not bloom on its own. If you want it to bloom, you have to work hard, and ignore the cuts you suffer. Today, the AB Party makes a bold pledge to work for the welfare of the people so that in this gloomy thorny garden, flowers bloom one day. In sha Allah, these distressing times will soon be over. If we can bring about changes, if we can work with hope whilst remaining aware of the risks, then of course, Bangladesh will turn around one day.
My Brothers and Sisters,
- All those who are listening to our announcement with interest at home and abroad, who have been our partners till date, who have guided us with advice, who have given us financial support, who have campaigned for us: to all of you, we express our sincere gratitude. We are grateful to the journalists and media personnel who came here on our invitation and took our initiative seriously. We are also grateful to those who have been with the ‘Jana Akangkhar Bangladesh’ initiative from the beginning, but have decided to cooperate from behind the scenes, as well-wishers, without leading from the front in the process of forming a new party.
- We know that many people in Bangladesh have negative ideas about politics for various reasons. The current crisis has made politics even more questionable. Politicians have once again denigrated politics by looting the relief distributed by the State. A number of politicians have come under fire – and rightly so - for ruining the crops of many farmers while attempting to cut paddy in the fields as a publicity stunt. On the other hand, the incompetent response of the state agencies and government authorities has created a crisis of confidence in the minds of the people about the capacity of the entire state machinery. The pandemic has made us realize anew how fragile our state is, and how incompetent, unprepared and corrupt our administration is. This crisis has exposed the failure of the government authorities in running the state machinery, and the undeniable necessity of reforming and rebuilding the state system.
- The founders of Bangladesh were committed to an independent, sovereign nation; yet today, a conscious citizen cannot but be overcome by grief, when he considers the state of the country. We live in a country where voting takes place on the night before the elections, where opposition politicians call for a boycott of the elections and subsequently take oath to participate in the proceedings of the ‘illegitimate’ Parliament, where criticism of the head of government leads to filing of criminal cases and imprisonment for sedition, where corruption is rampant, where people are ‘picked-up’ and never return, and where females – from four year olds to senior citizens- are subjected to unspeakable tortures. Large sections of the population are suffering every day, be it because of the high youth unemployment rate, or the toxic air pollution levels, or the adulteration in the food, or even the light drizzle that causes entire cities to be submerged. A state which cannot guarantee the practise of democratic values or the protection of human rights, human dignity and the life of its citizens, cannot claim to be a legitimate state. It is true that we have achieved territorial independence based on our geographical boundaries, but the dream with which the country became independent has not been fulfilled. Our state fails to meet the standards of a model rights-based welfare state. And that is precisely why, on 27 April 2019, we declared that the state machinery needs to be radically reformed. The AB Party wants to work with the people, the true owners of the country, to engage in the process of reconstruction of the state. We want to see Bangladesh as a just welfare state which will work towards fulfilling the aspirations of the people and liberating them from all forms of oppression.
Fellow countrymen,
- Before 1947, we were oppressed and exploited in British India. As a Muslim majority people, we were marginalised. Independence was achieved in 1947 based on religious identity. After 1947, we were discriminated against as Bengalis in the newly formed state of Pakistan. We were tortured by the state machinery for demanding ou